• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

সাফল্যের শেষ ধাপে ৮ প্রকল্প

  • ''
  • প্রকাশিত ২৮ এপ্রিল ২০২৪

রহমত আলী খন্দকার:

একের পর এক মেগা প্রকল্পের রাস্তা বাস্তবায়নের সুফল পাচ্ছে দেশের মানুষ। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এনেছে আমূল পরিবর্তন। নানামুখী সংকটেও সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা প্রকল্পগুলোর কাজ এগিয়ে চলছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটেও গুরুত্ব পায় প্রকল্পগুলো। এই ৮ মেগা প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অগ্রগতি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে।

আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেগা প্রকল্পগুলোর চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত গড় ভৌত অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি বেশি হলেও আর্থিক অগ্রগতি তুলনামূলক কম। মার্চ পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। অগ্রগতির দিক থেকে পদ্মার পরই এগিয়ে আছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ প্রকল্পের ৯৭ ভাগেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে। ৯৫ শতাংশ কাজ হয়েছে কক্সবাজার থেকে ঘুমধুম রেলপথ প্রকল্পের। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ হয়েছে ৯২ ভাগের বেশি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আট মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৬৮১ কোটি ৫ লাখ টাকা। শুরু থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত এসব প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে। এ প্রকল্পে মার্চ মাস পর্যন্ত খরচ ৭১ হাজার ৮৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জনকল্যাণে নেওয়া এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে যাতে জনভোগান্তি না হয়, সে জন্য সরকারপ্রধানের নির্দেশনা রয়েছে। সরকার অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। তা কার্যকর করতে চলমান সংকটেও সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত আট মেগা প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত। অনেক প্রকল্পের অর্থ কাটছাঁট হলেও এগুলোর ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরে বেশি করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, বড় পরিসরে কাজ করতে গেলে জনগণের ভোগান্তিও হয়। এসব কারণে বড় প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে, যাতে বাস্তবায়নে কোনো রকম বাধাগ্রস্ত না হয় এবং দ্রুততম সময়ে শেষ হয়।

শতভাগ শেষ পদ্মা সেতুর কাজ : ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় পদ্মা সেতু। গত মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৮০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ২৬ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে।

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শেষ প্রায় ৯৮ ভাগ : রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৭ দশমিক ৬১ শতাংশ।

৯৫ ভাগ শেষ দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথের : দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৪০৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এ ছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ শতাংশ।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ শেষ ৯৩ ভাগ : এ প্রকল্পটি ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭৮১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ৬০ শতাংশ।

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের কাজ হয়েছে প্রায় ৯০ ভাগ : পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে গত মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩১ হাজার ৮৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৯০ ভাগ। আর আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮১ দশমিক ২৮ শতাংশ। প্রকল্পটি ২০১৬-এর জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।

মেট্রোরেলের কাজ হয়েছে ৮৭ ভাগ : ২০১২ সালে শুরু হয়ে মেট্রোরেল প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশের কাজ শেষ হলে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়। এরপর গত ডিসেম্বরে মতিঝিল পর্যন্তও খুলে দেওয়া হয়েছে। শুরু থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয়সহ মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ ভাগ।

মহেশখালী-মাতারবাড়ীর কাজ এগিয়েছে সাড়ে ৮৪ ভাগ : মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (১২টি প্রকল্পযুক্ত) প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩৯ হাজার ৭৫৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। কাজ হয়েছে সাড়ে ৮৪ ভাগ। আর্থিক অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি সাড়ে ৬৫ ভাগ : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটির শুরু থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭১ হাজার ৮৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে এ প্রকল্পটি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads